এইচএসসি নিউটনীয় বলবিদ্যা অনুধাবনমূলক ম্যারাথন

01. নরম মাটিতে লাফ দিলে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা কম – ব্যাখ্যা কর।

[DB’22]

উত্তর:
কোনো ব্যক্তি নরম মাটিতে লাফ দিলে, মাটি তার উপর একটি প্রতিক্রিয়া বল প্রয়োগ করে। যেহেতু নরম মাটির দৃঢ়তা কম, তাই প্রতিক্রিয়া বলের মান কম হয় এবং বলের ক্রিয়াকাল বেশি হয়। এর ফলে, ব্যক্তির শরীরে যে ধাক্কা লাগে তা কম শক্তিশালী হয়, যার ফলে আঘাত পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

[DB’22]
02. কৌণিক ভরবেগের দিক কীভাবে পাওয়া যায়- ব্যাখ্যা কর।

উত্তর:
ঘূর্ণন অক্ষ সাপেক্ষে কোনো বস্তুর জড়তার ভ্রামক এবং কৌণিক বেগের গুণফলকে কৌণিক ভরবেগ বলা হয়। আমরা জানি, কৌণিক ভরবেগ,
$$ L = r \times p $$ এখানে, কৌণিক ভরবেগের দিক সেই তলের লম্ব বরাবর হয়, যেই তলে r (অবস্থান ভেক্টর) এবং p (ভরবেগ ভেক্টর) অবস্থিত। ক্রস গুণনের নিয়ম দ্বারা কৌণিক ভরবেগের দিক পাওয়া যায়।


03. দরজার হাতল মাঝে না রেখে প্রান্তে রাখা হয় কেন?

[RB’22]

উত্তর:
কোনো দরজা কত সহজে খোলা যাবে তা নির্ভর করে প্রযুক্ত টর্কের উপর। টর্কের সূত্র অনুযায়ী, $$\tau = F \times r$$ যেখানে ( F ) হলো প্রয়োগ করা বল এবং ( r ) হলো বলের প্রয়োগ বিন্দু থেকে ঘূর্ণন অক্ষের দূরত্ব। নির্দিষ্ট কোণে বল প্রয়োগের ক্ষেত্রে, ঘূর্ণন অক্ষ থেকে বলের প্রয়োগ বিন্দুর দূরত্ব যত বেশি হবে, টর্কের পরিমাণ তত বেশি হবে। তাই দরজার হাতল মাঝে না রেখে প্রান্তে রাখা হয়, যাতে কম বল প্রয়োগেই দরজাটি সহজে খোলা যায়।

04. ঘূর্ণনরত পৃথিবী সূর্য হতে দূরে সরে গেলে এর বেগ কমে যায় কেন? ব্যাখ্যা কর।

[Ctg.B’22]

উত্তর:
পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণনরত অবস্থায় থাকে, এবং এর কৌণিক ভরবেগ সবসময় সংরক্ষিত থাকে। কৌণিক ভরবেগের সূত্র অনুসারে, ( L = mvr ), যেখানে ( L ) হলো কৌণিক ভরবেগ, ( m ) হলো পৃথিবীর ভর, ( v ) হলো এর গতি, এবং ( r ) হলো সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব। যখন পৃথিবী সূর্য থেকে দূরে সরে যায়, তখন ( r ) বৃদ্ধি পায়। যেহেতু কৌণিক ভরবেগ ( L ) সংরক্ষিত থাকে, ( r ) বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ( v ) অর্থাৎ পৃথিবীর বেগ কমে যায়। সুতরাং, পৃথিবী সূর্য থেকে যত দূরে সরে যায়, এর বার্ষিক গতি তত কমে যায়।

05. রাস্তার বাঁকে সাইকেল আরোহীকে ভেতরের দিকে হেলে বাঁক নিতে হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

[Ctg.B’22]

উত্তর:
রাস্তার বাঁকে সাইকেল আরোহীকে কেন্দ্রবিমুখী বলের কারণে যাতে ছিটকে না যায়, সেজন্য তাকে ভেতরের দিকে হেলে সাইকেল চালাতে হয়। আরোহীর এই হেলানোর ফলে, তার ওজনের উপাংশ ( $$mg \sin \theta$$ ) ভিতরের দিকে কাজ করে এবং কেন্দ্রবিমুখী বলকে প্রশমিত করে। ফলে সাইকেলটি স্থিতিশীলভাবে বাঁক নিতে পারে।


06. যে মৌলিক বল ঘর্ষণ বল সৃষ্টি করে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

[BB’22]

উত্তর:
ঘর্ষণ বল সৃষ্টির জন্য দায়ী মৌলিক বল হলো তাড়িতচৌম্বক বল। দুটি আহিত কণা তাদের আধানের কারণে একে অপরের ওপর যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল প্রয়োগ করে তাকে তাড়িতচৌম্বক বল বলে। তড়িৎ প্রভাব ও চৌম্বক প্রভাব অবিচ্ছেদ্য হওয়ায় এই বলকে তাড়িতচৌম্বক বল নামে ডাকা হয়। মহাকর্ষ বলের মতোই তাড়িতচৌম্বক বলের পাল্লা অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত, এবং এ বলের ক্রিয়ার জন্য কোনো মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না।


07. সমবেগে উঠানামা করা লিফটের যাত্রীর ওজনের পরিবর্তন হয় না কেন? ব্যাখ্যা কর।

[JB’22]

উত্তর:
সমবেগে চলমান লিফটের যাত্রীর ওজনের কোনো পরিবর্তন হয় না কারণ তখন লিফটে কোনো ত্বরণ থাকে না। ফলে, পৃথিবীর অভিকর্ষজ ত্বরণ এর সাথে কোনো লব্ধি তৈরি হয় না। যাত্রীর ওজন ( W = m(g \pm a) ) সূত্র অনুযায়ী, যেহেতু ( a = 0 ) (লিফট সমবেগে চললে), তাই ( $$W = mg$$ ), অর্থাৎ যাত্রীর ওজন অপরিবর্তিত থাকে।


08. রাস্তার ব্যাংকিং এর প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।

[CB’22]

উত্তর:
বাঁকা পথে গাড়ি চলার সময় এর জড়তার কারণে গাড়ি উল্টে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই জড়তা প্রতিহত করার জন্য গাড়িকে একটি কেন্দ্রমুখী বলের সৃষ্টি করতে হয়, যা গাড়ির বাঁক নেওয়ার সময় প্রয়োজন। যদি সমতল রাস্তায় গাড়ি কাত হয়, তবে বিপর্যয়ের সম্ভাবনা থাকে। এজন্য, রাস্তার বাঁকের ভিতরের প্রান্ত থেকে বাইরের প্রান্ত কিছুটা উঁচু করা হয়, যা ব্যাংকিং নামে পরিচিত। এটি গাড়ির জন্য প্রয়োজনীয় কেন্দ্রমুখী বলের সৃষ্টি করে, যাতে গাড়িটি নিরাপদে বাঁক নিতে পারে।

09. পৃথিবী নিজ অক্ষের সাপেক্ষে সমদ্রুতিতে আবর্তনরত হলেও সূর্যের চারপাশে নয় – ব্যাখ্যা কর।

[CB’22]

উত্তর:
পৃথিবী নিজ অক্ষের সাপেক্ষে সমদ্রুতিতে আবর্তনরত হলেও সূর্যের চারপাশে তা নয়, কারণ পৃথিবীর কক্ষপথ উপবৃত্তাকার। এই কারণে, সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সর্বদা সমান থাকে না। তবে, পৃথিবীর কৌণিক ভরবেগ সবসময় সংরক্ষিত থাকে। ফলে, কৌণিক ভরবেগ ধ্রুবক রাখতে পৃথিবীর কৌণিক বেগ দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতে পরিবর্তিত হয়। এজন্য, সূর্যের চারপাশে পৃথিবীর গতি সমান থাকে না।

10. ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বল পরস্পরকে প্রশমিত করে না – ব্যাখ্যা কর।

[Din.B’22]

উত্তর:
ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া বলের মান সমান এবং দিক বিপরীত হলেও তারা একে অপরকে নিষ্ক্রিয় করে না। নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুসারে, ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সবসময় ভিন্ন ভিন্ন বস্তুর উপর কাজ করে। ফলে কোনো বস্তুর উপর নিট বল শূন্য হয় না এবং বল নিষ্ক্রিয় হয় না।

11. কোথায় বল প্রয়োগে দরজা দ্রুত খুলবে – ব্যাখ্যা কর।

[MB’22]

উত্তর:
কোনো দরজার উপর প্রযুক্ত বল ভিন্ন মানের কৌণিক ত্বরণ সৃষ্টি করতে পারে, যা নির্ভর করে বল কোথায় এবং কোন দিকে প্রয়োগ করা হয়েছে তার উপর। যদি দরজার কবজার উপর সরাসরি বল প্রয়োগ করা হয়, তাহলে কোনো কৌণিক ত্বরণ সৃষ্টি হবে না। তবে, একই মানের বল যদি দরজার বাইরের প্রান্তে দরজার সাথে লম্বভাবে প্রয়োগ করা হয়, তাহলে সর্বোচ্চ কৌণিক ত্বরণ সৃষ্টি হবে। সুতরাং, দরজা দ্রুত খোলার জন্য বল দরজার প্রান্তে এবং দরজার সাথে লম্বভাবে প্রয়োগ করা উচিত। এর ফলে ঘূর্ণন অক্ষ থেকে বলের প্রয়োগ বিন্দুর দূরত্ব বেশি হবে, যা দরজা দ্রুত খোলার প্রক্রিয়াকে সহজতর করে।

12. ব্যালে ড্যান্সের ক্ষেত্রে কৌণিক ভরবেগের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।

[MB’22]

উত্তর:
ব্যালে ড্যান্সের ক্ষেত্রে ব্যালেরিনার শরীরের অঙ্গভঙ্গির পরিবর্তন এমনভাবে ঘটে যে, তার জড়তার ভ্রামক ও কৌণিক বেগের পরিবর্তন হয়। যেহেতু বাইরে থেকে কোনো বল বা টর্ক প্রযুক্ত করা হয় না, তাই তার কৌণিক ভরবেগ ধ্রুব থাকে। অর্থাৎ, ব্যালেরিনার জড়তার ভ্রামক ও কৌণিক বেগের গুণফল সবসময় একই থাকে। উদাহরণস্বরূপ, ব্যালেরিনা যখন হাত-পা গুটিয়ে নেয়, তখন তার জড়তার ভ্রামক কমে এবং কৌণিক বেগ বেড়ে যায়, ফলে সে দ্রুত ঘুরতে থাকে। আবার, হাত-পা প্রসারিত করলে জড়তার ভ্রামক বেড়ে যায় এবং কৌণিক বেগ কমে যায়, ফলে তার ঘূর্ণন গতিও কমে যায়।

13. ঘূর্ণনক্ষম কোনো বস্তুর জড়তার ভ্রামক বেশি হলে কী হয়? ব্যাখ্যা কর।

[DB’21]

উত্তর:
ঘূর্ণনক্ষম কোনো বস্তুর জড়তার ভ্রামক বেশি হলে বস্তুটির কৌণিক ভরবেগ এবং ঘূর্ণন গতিশক্তি বেশি হয়। এর ফলে ঘূর্ণনক্ষম বস্তুকে থামাতে বা ত্বরণ/মন্দন ঘটাতে বেশি পরিমাণ বলের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ, জড়তার ভ্রামক বেশি হলে বস্তুর ঘূর্ণন অবস্থা পরিবর্তন করা কঠিন হয়ে যায়, কারণ এতে কৌণিক ভরবেগ বজায় রাখতে বেশি শক্তি প্রয়োজন হয়।

14. “গাড়ির চাকার নাট-বল্টু খোলার ক্ষেত্রে লম্বা হাতলযুক্ত যন্ত্র ব্যবহার সুবিধাজনক” – ব্যাখ্যা কর।

[RB’21]

উত্তর:
“গাড়ির চাকার নাট-বল্টু খোলার ক্ষেত্রে লম্বা হাতলযুক্ত যন্ত্র ব্যবহার সুবিধাজনক” – এই বক্তব্যটি যথার্থ। কারণ, লম্বা হাতলে কম বল প্রয়োগে প্রয়োজনীয় টর্ক পাওয়া যায়। এখানে লিভারের নীতির প্রয়োগ দেখা যায়। টর্কের সূত্র, ($$ \tau = r \times F = rF \sin \theta$$ ) থেকে বোঝা যায় যে r বা d যত বেশি হবে, ততই বেশি টর্ক পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, লম্বা হাতলযুক্ত যন্ত্রে কম বল প্রয়োগে অধিক টর্ক সৃষ্টি হয়, যা নাট-বল্টু খোলার কাজকে সহজ করে। খাটো হাতলের যন্ত্রের ক্ষেত্রে বেশি বল প্রয়োগ করতে হয়, কিন্তু লম্বা হাতলে কম বল প্রয়োগেই কাঙ্ক্ষিত টর্ক পাওয়া যায়, যা কাজকে সহজতর করে।

15. বালির উপর দিয়ে হাঁটা কষ্টসাধ্য কেন?

[Ctg.B’21]

উত্তর:
বালির উপর দিয়ে হাঁটা কষ্টসাধ্য কারণ বালিতে প্রতিক্রিয়া বল ও ঘর্ষণ বল কম। যখন আমরা বালিতে হাঁটি, বালির দানাগুলো সহজেই সরে যায়, ফলে পায়ের দ্বারা প্রয়োগ করা বলের বিপরীতে খুব কম প্রতিক্রিয়া বল পাওয়া যায়। এছাড়া, বালি কণাগুলোর সরার কারণে ঘর্ষণ বলও কমে যায়, যা আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। ঘর্ষণ কম হলে পা পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়, আর সামনে যাওয়ার জন্য বেশি বল প্রয়োগ করতে হয়। এ কারণেই বালির উপর দিয়ে হাঁটা কষ্টসাধ্য।

16. একজন নৃত্যশিল্পী ঘূর্ণনের সময় দুই হাত ভাঁজ করে নেয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

[Ctg.B’21]

উত্তর:
একজন নৃত্যশিল্পী ঘূর্ণনের সময় দুই হাত ভাঁজ করে নেয় কারণ এতে তার জড়তার ভ্রামক কমে যায়, কিন্তু কৌণিক ভরবেগ সংরক্ষিত থাকে। আমরা জানি, কৌণিক ভরবেগ, ($$ L = I\omega $$), যেখানে ( I ) হলো জড়তার ভ্রামক এবং ( $$\omega $$) হলো কৌণিক বেগ। হাত ভাঁজ করার ফলে ভর কণাগুলো ঘূর্ণন অক্ষের কাছাকাছি চলে আসে, ফলে ( I ) কমে যায়। কিন্তু ( L ) ধ্রুবক থাকায়, ( $$\omega$$ ) বা কৌণিক বেগ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে নৃত্যশিল্পী দ্রুত ঘুরতে থাকে, যা নৃত্যের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে।

17. উলম্ব তলে ঘূর্ণায়মান রোলার কোস্টারের যাত্রী নিচে পড়ে না কেন? ব্যাখ্যা কর।

[Ctg.B’21]

উত্তর:
উলম্ব তলে ঘূর্ণায়মান রোলার কোস্টারে যাত্রী নিচে পড়ে না কারণ এ অবস্থায় যাত্রীর উপর ক্রিয়াশীল কেন্দ্রমুখী ও কেন্দ্রবিমুখী বল পরস্পর সমান হয়ে যায়, ফলে ব্যাসার্ধ বরাবর লব্ধি বল শূন্য হয়ে যায়। উলম্ব ঘূর্ণনে চেইনের টান বল, উচ্চতায় অভিকর্ষজ বল কেন্দ্রমুখী বল হিসেবে কাজ করে, এবং ঘূর্ণনের ফলে কেন্দ্রবিমুখী বলও সৃষ্টি হয়। এই বলগুলো পরস্পরের বিপরীতে কাজ করে, যার ফলে যাত্রী রোলার কোস্টারের সাথে সুরক্ষিত থাকে এবং নিচে পড়ে যায় না।

18. বলের ব্যবহারিক একক ‘নিউটন’ একটি লব্ধ একক- ব্যাখ্যা কর।

[JB’21]

উত্তর:
মৌলিক একক থেকে যে একক পাওয়া যায় তাকে লব্ধ একক বলা হয়। বলের একক নিউটন (N) একটি লব্ধ একক। আমরা জানি, বল ( F = ma ), যেখানে ( m ) হলো ভর এবং ( a ) হলো ত্বরণ। বলের একক নিউটনকে ($$ N = \text{kg} \times \text{m/s}^2 $$) হিসাবে প্রকাশ করা হয়। এখানে ভরের একক কিলোগ্রাম (kg) এবং ত্বরণের একক মিটার/সেকেন্ড^2 ($$m/s^2$$)। এই দুটি মৌলিক একক থেকে নিউটন এককটি লব্ধ হয়, তাই বলের একক নিউটন একটি লব্ধ একক।

19. হাত গুটানো বা প্রসারিত অবস্থায় ঘুরলে কোন ক্ষেত্রে কৌণিক বেগ বেশি হবে? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর:
কৌণিক ভরবেগের সংরক্ষণশীলতা অনুযায়ী, ($$ I_1 \omega_1 = I_2 \omega_2 $$), যেখানে ( $$I_1$$ ) এবং ( $$I_2 $$) হলো জড়তার ভ্রামক, এবং ($$ \omega_1 $$) এবং ( $$\omega_2$$ ) হলো কৌণিক বেগ। হাত গুটানোর ফলে জড়তার ভ্রামক ( I ) কমে যায়, ফলে ( $$\omega$$ ) বা কৌণিক বেগ বৃদ্ধি পায়। হাত প্রসারিত করলে জড়তার ভ্রামক ( I ) বৃদ্ধি পায় এবং কৌণিক বেগ ( $$\omega$$ ) কমে যায়। তাই হাত গুটানো অবস্থায় কৌণিক বেগ বেশি হবে।

20. দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে বল বিপরীত দিকে ফিরে আসে কেন?

[CB’21]

উত্তর:
নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী, প্রতিটি ক্রিয়ার জন্য একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। যখন একটি বল দেয়ালের সাথে ধাক্কা খায়, তখন দেয়ালও বলের প্রতি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই প্রতিক্রিয়া বলের কারণে বল বিপরীত দিকে ফিরে আসে। এই পরিস্থিতিতে, বলের উপর প্রয়োগিত প্রতিক্রিয়া বলটি তার গতির দিক পরিবর্তন করে, ফলে বল বিপরীত দিকে ফিরে আসে।

21. উলম্ব তলে দ্রুত ঘূর্ণনরত পানি ভর্তি বালতির পানি পড়ে যায় না কেন? ব্যাখ্যা কর।

[CB’21]

উত্তর:
উলম্ব তলে দ্রুত ঘূর্ণনরত পানি ভর্তি বালতির পানি পড়ে যায় না কারণ কেন্দ্রবিমুখী বা অপকেন্দ্র বল কাজ করে। যখন বালতিটি ঘূর্ণায়মান থাকে, পানি কেন্দ্র থেকে বাইরে ধাক্কা দেয় এবং এই অপকেন্দ্র বল বালতির পানি বাইরে ফেলা থেকে রোধ করে। পানির উপর কাজ করা কেন্দ্রবিমুখী বল বালতির ভিতরের পানিকে জায়গায় ধরে রাখে, ফলে পানি পড়ে যায় না।

22. টর্ক ও বলের মধ্যে পার্থক্য লিখ।

উত্তর:

বলটর্ক
বস্তুর ভর এবং ত্বরণের গুণফলকে বল বলে।ব্যাসার্ধ ভেক্টর এবং বলের ভেক্টর গুণফলকে টর্ক বলে।
বলের একক নিউটন (N)।টর্কের একক নিউটন-মিটার (Nm)।
বল দ্বারা বোঝা যায় রৈখিক বেগকে কত সহজে পরিবর্তন করা যায়।টর্ক দ্বারা বোঝা যায় কত সহজে কৌণিক বেগ পরিবর্তন করা সম্ভব। অর্থাৎ, কত সহজে বস্তুটিকে ঘুরানো যাবে।

23. ঘূর্ণন অক্ষ সাপেক্ষে বৈদ্যুতিক পাখার সকল বিন্দুর কৌণিক বেগ সমান কেন?

[Din.B’21; DB’16]

উত্তর:
ঘূর্ণন অক্ষ সাপেক্ষে বৈদ্যুতিক পাখার সকল বিন্দুর কৌণিক বেগ সমান থাকে কারণ কৌণিক বেগ কেবলমাত্র ঘূর্ণন অক্ষের চারপাশে ঘূর্ণনের হারকে প্রকাশ করে। কৌণিক বেগ, ( $$\omega $$), একটি নির্দিষ্ট সময়ে কৌণিক সরণের হার হয় এবং এটি পাখার সকল বিন্দুর জন্য একই থাকে। অর্থাৎ, পাখার এক একটি বিন্দুর দূরত্ব পরিবর্তন হলেও, তাদের কৌণিক বেগ এক ধরনের সাপেক্ষিক পরিবর্তনের উপর নির্ভর করে না।

24. নৌকা থেকে লাফ দেওয়ার সময় নৌকা পিছিয়ে যায় কেন?

[Din.B’21]

উত্তর:
নৌকা থেকে লাফ দেওয়ার সময় নৌকা পিছিয়ে যায় কারণ নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী, প্রতিটি ক্রিয়ার একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া থাকে। যখন ব্যক্তি নৌকা থেকে লাফ দেয়, তখন সে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ গতি নৌকার দিকে প্রয়োগ করে। তার বিপরীতে, নৌকা ব্যক্তির দিকে একটি সমান ও বিপরীত গতি প্রয়োগ করে, ফলে নৌকা পিছিয়ে যায়। এইভাবে, ভরবেগ সংরক্ষিত থাকে এবং নৌকা পিছিয়ে যায়।

25. রকেটের গতি কীভাবে ভরবেগের সংরক্ষণনীতি মেনে চলে?

[MB’21]

উত্তর:
রকেটের গতি ভরবেগের সংরক্ষণনীতি মেনে চলে কারণ রকেট যখন গ্যাস নির্গত করে, তখন গ্যাসের গতির বিপরীতে রকেটের উপর একটি বল সৃষ্টি হয়। নিউটনের তৃতীয় সূত্র অনুযায়ী, গ্যাসের নির্গমনের কারণে রকেটের উপর যে প্রতিক্রিয়া বল কাজ করে, তা রকেটের উপরের গতি বাড়ায়। গ্যাসের ভরবেগের পরিবর্তন এবং রকেটের ভরবেগের পরিবর্তন সমান ও বিপরীত হয়, ফলে রকেটের গতি ভরবেগের সংরক্ষণ নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।

26. ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া একই বস্তুর উপর কীভাবে কাজ করে?

[MB’21]

উত্তর:
ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া সর্বদা দুটি ভিন্ন বস্তুর উপর কাজ করে। একসাথে একই বস্তুর উপর কাজ করতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ, যদি একটি বস্তুর উপর অন্য একটি বস্তু শক্তি প্রয়োগ করে, তবে প্রথম বস্তুও দ্বিতীয় বস্তুর উপর একটি বিপরীত শক্তি প্রয়োগ করে। তাই, ক্রিয়া এবং প্রতিক্রিয়া দুটি ভিন্ন বস্তুর উপর কাজ করে এবং একটি বস্তুর উপর একে অপরের সমান ও বিপরীত হয়।

27. কোনো অক্ষের সাপেক্ষে একটি বস্তুর চক্রগতির ব্যাসার্ধ 0.9m বলতে কী বোঝায়?

[DB’19]

উত্তর:
চক্রগতির ব্যাসার্ধ 0.9 m বলতে বোঝায় যে, যদি বস্তুর সমস্ত ভরকে একটি বিন্দুতে কেন্দ্রীভূত করা হয় যা এই নির্দিষ্ট অক্ষ থেকে 0.9 m দূরে অবস্থিত, তবে সেই বিন্দুর সাপেক্ষে বস্তুটির জড়তার ভ্রামক সমান হবে বস্তুটির প্রকৃত জড়তার ভ্রামকের। এটি বোঝায় যে, চক্রগতির ব্যাসার্ধ একটি পরিমাপ যা ঐ অক্ষের সাপেক্ষে বস্তুর ঘূর্ণনের অঙ্গসামগ্রীকে প্রতিফলিত করে।

28. দুটি বস্তু সংঘর্ষের পর একসাথে আটকে গেলে সংঘর্ষটি স্থিতিস্থাপক হবে কি? ব্যাখ্যা কর।

[Ctg.B’19]

উত্তর:
যদি দুটি বস্তু সংঘর্ষের পর একসাথে আটকে যায়, তবে সেই সংঘর্ষটি স্থিতিস্থাপক হবে না। স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষের ক্ষেত্রে সংঘর্ষের পূর্বে ও পরে বস্তুর আপেক্ষিক বেগ ধ্রুব থাকে। কিন্তু, যদি সংঘর্ষের পর বস্তুর আপেক্ষিক বেগ শূন্য হয় (যেমন, একসাথে আটকে যাওয়া), তাহলে আপেক্ষিক বেগের পরিবর্তন ঘটে। তাই সংঘর্ষটি স্থিতিস্থাপক হয় না।

29. ভরকে জাড্যভর বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর:
ভরকে জাড্যভর বলা হয় কারণ এটি বস্তুর জাড্যের পরিমাপ। জাড্যভর এমন একটি মাপ যা বস্তুর একটি অবস্থান থেকে অন্য অবস্থানে পরিবর্তন ঘটানোর জন্য প্রয়োজনীয় বলের পরিমাণ নির্ধারণ করে। নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী, ( F = ma ), যেখানে ( m ) হলো জাড্যভর। আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা সূত্র অনুযায়ী, জাড্যভর বস্তুর বেগের সাথে বৃদ্ধি পায়।

30. জড়তা হতে বলের ধারণা পাওয়া যায় কি? আলোচনা কর।

উত্তর:
জড়তা হলো একটি বস্তুর অবস্থানে থাকার প্রবণতা। এটি বস্তুর গতিতে পরিবর্তন না ঘটানোর বা তার স্থির অবস্থায় থাকাকে বোঝায়। বল হলো সেই বাহ্যিক শক্তি যা বস্তুর জড়তাকে অতিক্রম করে তার অবস্থান বা গতিতে পরিবর্তন ঘটায়। অর্থাৎ, বল সেই শক্তি যা বস্তুর জড়তার বিরুদ্ধে কাজ করে এবং বস্তুর অবস্থান বা গতিতে পরিবর্তন ঘটায়। তাই, জড়তা হতে বলের ধারণা পাওয়া যায়।

31. পৃথিবীর নিজ অক্ষের চারপাশে ঘূর্ণন হঠাৎ থেমে গেলে পৃথিবী পৃষ্ঠে g এর মানের কীরূপ পরিবর্তন হবে? ব্যাখ্যা কর।

[JB’19]

উত্তর:
যদি পৃথিবীর নিজ অক্ষের চারপাশে ঘূর্ণন হঠাৎ থেমে যায়, তাহলে পৃথিবী পৃষ্ঠে ( g ) এর মান বৃদ্ধি পাবে। এটি ঘটে কারণ ঘূর্ণনের ফলে কেন্দ্রবিমুখী বল পৃথিবীর পৃষ্ঠের দিকে একটি নিম্নমান বজায় রাখে। ঘূর্ণন বন্ধ হলে, কেন্দ্রবিমুখী বলের অভাবের কারণে পৃষ্ঠের অভিকর্ষজ বল বৃদ্ধি পাবে। তাই, ( g ) এর মান ঘূর্ণন বন্ধ হয়ে গেলে ( $$w^2 R \cos^2 \theta$$ ) পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।

32. কোনো বস্তুর ওপর ক্রিয়াশীল টর্ক কখন শূন্য হয়? ব্যাখ্যা কর।

[CB’19]

উত্তর:
যদি একটি বস্তু সমকৌণিক বেগে চলতে থাকে, তবে ক্রিয়াশীল টর্ক শূন্য হয়। টর্ক $$τ=r×F\tau = r \times Fτ=r×F $$যেখানে r হলো ব্যাসার্ধ এবং FFF হলো বল। যদি বস্তু কৌণিক ত্বরণ না হয়, তাহলে $$τ=0\tau = 0τ=0$$। এছাড়া, যদি টর্ক বস্তুর ঘূর্ণন অক্ষের বরাবর কাজ করে (যেমন, বাহ্যিক বল সরাসরি অক্ষের বরাবর), তবে টর্কও শূন্য হবে।

33. ঘূর্ণনরত বস্তুর কৌণিক ভরবেগ কোনো শর্তে শূন্য হয়? ব্যাখ্যা কর।

[Din.B’19]

উত্তর:
ঘূর্ণনরত বস্তুর কৌণিক ভরবেগ শূন্য হয় যখন বস্তুর ব্যাসার্ধ ভেক্টর এবং ভরবেগ ভেক্টরের মধ্যে কোণ $$ 0∘0^\circ0∘$$ বা $$180∘180^\circ180∘$$ হয়। কৌণিক ভরবেগ $$L=r×pL = r \times pL=r×p$$, যেখানে rrr হলো ব্যাসার্ধ ভেক্টর এবং ppp হলো ভরবেগ। যদি ব্যাসার্ধ ভেক্টর এবং ভরবেগ ভেক্টর একে অপরের দিকে থাকে (যেমন সরলরৈখিক গতি), তখন $$sin⁡θ=0\sin \theta = 0sinθ=0$$ হয়, এবং কৌণিক ভরবেগ শূন্য হয়।

34. ঘর্ষণ বল একটি অসংরক্ষণশীল বল- ব্যাখ্যা কর।
[All. B’18]
ঘর্ষণ বলের ক্ষেত্রে এক বিন্দু হতে যাত্রা শুরু করে যে কোনো পথ ঘুরে আবার ঐ বিন্দুতে ফিরে এলে কৃত কাজ শূন্য হয় না। ঘর্ষণ বল দ্বারা কাজ আদি ও চূড়ান্ত বিন্দুর উপর নির্ভর করে না, গতিপথের উপর নির্ভর করে। ঘর্ষণ বল কর্তৃক কাজ পুনরুদ্ধার করা যায় না। তাই ঘর্ষণ বল অসংরক্ষণশীল বল।

35. বল কীভাবে ক্রিয়াশীল থাকলে একটি বস্তু সমদ্রুতিতে গতিশীল থাকবে তা ব্যাখ্যা কর।
[DB’17]
উত্তর:
বল বেগের সাথে সমকোণে ক্রিয়া করলেই বস্তু সমদ্রুতিতে থাকতে পারে। কেননা সমকোণ ছাড়া অন্য কোনো কোণে বল ক্রিয়া করলে বেগের দিক বরাবর বলের একটি উপাংশ থাকবে। এই উপাংশ বস্তুর দ্রুতি পরিবর্তন করে ফেলবে। একটি বস্তু সমদ্রুতিতে ঘুরানো হলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়। কেন্দ্রমুখী বল বেগের সমকোণে ক্রিয়া করে। ফলে দ্রুতি পরিবর্তিত হয় না।

36. “জড়তার ভ্রামক 50kgm²” বলতে কী বোঝ?
[RB’17]
উত্তর:
জড়তার ভ্রামক 50 kg·m² বলতে বুঝায়—বস্তুটিকে ঐ অক্ষের চারদিকে 1 rad/s² কৌণিক ত্বরণে ঘুরাতে হলে 50 Nm পরিমাণ টর্ক প্রয়োজন। অন্যভাবে বলা যায়, বস্তুটির উপর 50 Nm টর্ক প্রয়োগ করা হলে, তা 1 rad/s² কৌণিক ত্বরণে ঘুরবে।

37. নিজ অক্ষের চারদিকে ঘূর্ণায়মান কোনো ব্যক্তির জড়তার ভ্রামক অর্ধেক হলে কৌণিক গতি দ্বিগুণ হয়-এর তাৎপর্য লিখ।
উত্তর:
বাহ্যিক কোনো টর্ক প্রয়োগ না হলে সিস্টেমের কৌণিক ভরবেগ অপরিবর্তিত থাকে। কোনো সিস্টেমের জড়তার ভ্রামক I এবং কৌণিক বেগ $$\omega$$ হলে, সিস্টেমের কৌণিক ভরবেগ $$L = I\omega$$। সুতরাং জড়তার ভ্রামক অর্ধেক করলে কৌণিক বেগ দ্বিগুণ হয়। একারণেই নৃত্যশিল্পী দ্রুত ঘূর্ণনের সময় হাত গুটিয়ে ফেলেন। এতে জড়তার ভ্রামক কমে যায় ও কৌণিক বেগ বৃদ্ধি পায়।

Picture of Rashed Rion
Rashed Rion

Physics, University of Chittagong

Faceook